টিন এজে ডিপ্রেশন : করণীয়
সুত্রঃ http://health.evergreenbangla.com
টিনএজে হচ্ছে মুক্ত বিহঙ্গের কাল। খোলা আকাশের অসীম নীলিমার মতো বিশাল কল্পনার জগতে ঢুকে পড়ে কিশোর কিশোরীরা। তাদের নিজেদের অপরিপক্কতার কারণে তুচ্ছ বাধাকে মনে হতে পারে অতি বড় বিপর্যয়। এভাবে তাদের মনে হতাশা বাসা বাঁধে গোপনে। ফলে তারা কনফিউজড হয়ে যেতে পারে। সব কিছুতে অতি মাত্রায় সংবেদনশীল এবং মুডি হয়ে যেতে পারে। আর এর প্রভাব পড়ে তাদের বাইরের আচরণে।
অনেক সময় সমস্যায় জড়িয়ে থাকা টিন এজেররা নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে না। স্কুলে কিংবা বাসায় বিষাদে ডুবে থাকে। তারা জানেই না যে, বিষাদে ভুগছে। বাবা-মাও বুঝতে পারেন না। তাদের কষ্ট বাইরে থেকে বুঝা যায় না। খারাপ আচরণগুলো ডিপ্রেশনের কারণে ঘটতে পারে। যা সহজে টের পাওয়া যায় না। হয়তো ডিপ্রেশনের সাথে ফাইট দিচ্ছে, কিন্তু আবেগ বা মুডের ব্যাখ্যায় যথাযথ শব্দ উপস্থাপন করতে পারে না। ডিপ্রেশন থাকলেও জানে না যে, সে সমস্যায় আছে। কাউকে বলে না বা সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কারো সাহায্য চায় না। সাধারণত মন খারাপ, বিষাদ বা ভালোলাগা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তবে বিষন্নতা বা মন খারাপ যদি জোরালো হয়, দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে থাকে কিংবা এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যায়-তাহলে কোনোরূপ দোদুল্যমনতায় না ভুগে মনোচিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে।
বিষন্নতার উপসর্গগুলো কী কী
বিষন্নতা রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে স্থায়ী অসুখী অনুভূতি, স্বাভাবিক কাজ করার প্রতি অনাগ্রহ, অক্ষমতা, অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা ইত্যাদি। আশাহত, অসহায়ত্ব এবং পাপবোধে জড়িয়ে যাওয়া। যার সাথে তাদের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই, সেই সব বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা, নিজের দোষ খোঁজা ইত্যাদি উপসর্গগুলোকেও অবহেলা করা যাবে না। এছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ রয়েছে যেমন:
ক) ঘুমের সমস্যা
খ) ওজন ও ক্ষুধার সমস্যা
গ) দৈহিক শক্তি কমে যাওয়া
ঘ) আনন্দময় জীবন যাপন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া
ঙ) মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া
চ) খারাপ সময়
ছ) খারাপ চিন-া
সামপ্রতিক বিশ্বে কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যা
উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরী জীবনের সোনালী দিনের হাতছানি পেয়ে এগুতে থাকে। চলার পথ সময় সময় মসৃন নয়। তাই অনভিজ্ঞতার কারণে অনেক কিছু বোঝে না তারা। আচমকা ব্যর্থতার গ্লানি সইতে পারে না। চরম হতাশা জাগে মনে। বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় না বলে শেষে আত্মহত্যা করে বসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ৪০ লক্ষ কিশোর কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে অনেক কারণ জড়িত রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, বিষাক্ত দ্রব্যাদি ও অ্যালকোহলের সহজপ্রাপ্যতা। পশ্চিমা দেশগুলোতে আত্মহত্যার সাথে জড়িত রয়েছে বিষাদরোগ ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আত্মহত্যার সাথে স্পষ্ট সংশ্লিষ্টতার কারণ ধরতে না পারলেও বলা হচ্ছে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ফ্যাক্টরগুলো আত্মহননের পথকে উসকে দেয়। আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট গবেষণার রিপোর্ট না থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ছাড়াও কোনো কিশোরী নির্যাতিতা হলে, পাড়ার মাস-ান কিংবা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে কেউ কেউ গলায় ফাঁস দিচ্ছে, কেউ আবার কীটনাশক বা বিষ খেয়ে অপমান আর লজ্জা থেকে নিজেকে নিস্কৃতি দিচ্ছে। অনেক টিন এজে প্রেমিক প্রেমিকা প্রেমে ব্যর্থতার কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে। গ্রাম এলাকায় অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত দরিদ্র পরিবারের অনেক কিশোরী মাতা সন-ানের পিতিৃত্বের দাবিতে বিচার না পেয়ে হতাশা আর বিষাদে ডুবে নিজেকে শেষ করে দেয়। টিনএজ কিশোররা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক সময়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে তাদের মনোজগতে ধস নামে বলে এক সময় আত্মহত্যা করে বসে। অধিকাংশ কিশোর কিশোরী, যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, এক পর্যায়ে তাদের মনোজগত এলোমেলো হয়ে পড়ে। মানসিকরোগ যেমন বিষাদে ডুবে যায় তারা। টিনএজারদের এই বিষন্নতা এবং আত্মহননের ইচ্ছে বা অনুভূতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। জয় করা সম্ভব সমস্যাকে।
উল্লেখিত কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আত্মহত্যা হচ্ছে জীবনের বেদনাদায়ক একটি প্রতিচিত্র। সফলতার সাথে এই করুণ অধ্যায়টি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আত্মহত্যার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
০ প্রাথমিক অবস্থায় ঝুঁকি নির্ণয় এবং চিকিৎসা। ডিপ্রেশন সনাক্ত করা সম্ভব হলে চিকিৎসা অনেক সহজ
০ কিশোর কিশোরীদের সহজ হাতের নাগাল থেকে কীটনাশক দ্রব্যাদি দুরে রাখা
০ তাদের যে কোনো সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং সমাধানের উদ্যোগ নেয়া
মা-বাবার করণীয়
টিন এজে সন্তানের সমস্যাগুলো বাবা-মাকে ধরতে হবে প্রথমে। তাদের মনোজগতের ঝড়, কষ্ট, রাগ, বিরক্তি, বিদ্রোহী মনোভাব কৌশলে সামাল দিতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে প্রফেশনাল হেল্প। মনোচিকিৎসায় এ ধরনের সমস্যাগুলোর যথাযথ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। টিনএজার নিজেকে হননের উদ্যোগ নিলে অবশ্যই বাবা-মাকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাকে বুঝতে দিতে হবে যে একা নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে হাজির করা না যায়, ততক্ষণ তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসার পরেও সতর্কতা কমানো যাবে না। পরিপূর্ণ চিকিৎসা না করা পর্যন্ত তার প্রতি নজর রাখতে হবে। বাবা-মার মনে রাখা জরুরি, আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা বা প্রচেষ্টা মানসিক চিকিৎসায় সর্বোচ্চ জরুরি অবস্থা। এছাড়াও বাবা-মাকে আরো যা যা করতে হবে:
০ সন্তানকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে যে, সবাই তার সাথে আছে
০ সন্তানের সমস্যার ব্যাপারে নিজের জানার পরিধি বাড়াতে হবে। শিশু বড় হওয়া, বেড়ে উঠা ইত্যাদি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ধারণা অর্জন করতে হবে
০ সন্তানকে বিভিন্ন কাজে উৎসাহ দিতে হবে
০ সন্তানকে কথা বলার জন্য উৎসাহী করতে হবে। তার নিজের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে
০ ভালো বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি মেশার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে হবে
০ যাকে বিশ্বাস করে, যার প্রতি আস্থাশীল, তার সাথে সব ধরণের অনুভূতি শেয়ারে ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে
০ সন্তানের আনন্দময় বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তার সাথে আনন্দময় কাজে বেশি করে অংশ নিতে হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment